রাঙ্গুনিয়ায় অপরিকল্পিত গভীর টিউবওয়েলের কারণে শুষ্ক মৌসুমে পানির তীব্র সঙ্কট
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র একের পর এক গভীর টিউবওয়েল বসানোর কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পৌরসভা সহ ১৫টি ইউনিয়নে ইউনিয়নের সহস্রাধিক টিউবওয়েলে সুপেয় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বৈশাখের এ তাপদাহে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে রাঙ্গুনিয়া জুড়ে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মধ্যে শুধুমাত্র পোমরা ইউনিয়নের ২০৯টি, চন্দ্রঘোনা কদমতলী পাহাড়ি এলাকায় ১০৩টি, রাজানগর ইউনিয়নে ১০৭টি, দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নে ৬৪টি, লালানগর ইউনিয়নে ১০৬টি, পারুয়া ইউনিয়নে ৮৭টি, পৌরসভায় ১০৬টি, বেতাগী ইউনিয়নে ৭৮টি. শিলক ইউনিয়নে ৭১টি, সরফভাটা ইউনিয়নের ৯১টি, কোদালা ইউনিয়নে ৭৮টি, মরিয়ম নগর ইউনিয়নের ৬৩টি, পারুয়া ইউনিয়নে ৭৯টি, মরিয়ম নগর ইউনিয়নে ১০৫টি, হোছনাবাদ ইউনিয়নে ১৪১টি, টিউবওয়েলের মধ্যে ইসলাম পুর ইউনিয়নে ৪৩টি, দক্ষিণ রাজানগরে ৫১ টি পানি ওঠা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এসব এলাকায় সুপেয় পানির তীর সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে প্রচণ্ড খরার কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে এসব টিউবওয়েল বন্ধ হয়ে গেছে।
উপজেলা পোমরা ইউনিয়নের বুড়ির দোকান এলাকার মো ইলিয়াছ বলেন, গত মাসের (মার্চ) শুরু থেকে আমাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে বসানো নলকূপ থেকে পানি উঠছে না। এতে পানির তীব্র সংকটে পড়েছি। পানির সংকট নিরসন ও খাবারের পানির চাহিদা মেটাতে উচ্চ ভোল্টেজের সাফমারসিবল মোটর বসিয়েছি। কিন্তু তাতেও খুব বেশি পানি উঠে না। দুই মাস আগেও পাঁচ মিনিট মোটর চালালে ৫০ লিটার পানি উঠত, এখন ৩০ মিনিটেও ৫০ লিটার উঠে না। গত রমজান মাসে সুপেয় পানির তীব্র সংকটে জনজীবন হাহাকার অবস্থা আমাদের।
একই ইউনিয়নের গৃহিণী আয়শা আকতার বলেন, গত জানুয়ারির শুরু থেকেই আমরা পানির সংকটে আছি। পার্শ্ববর্তী এলাকার একটি অগভীর নলকূপ থেকে অনেক কষ্ট করে পানি এনে গৃহস্থালির কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে গোসল ও অন্যান্য কাজ কর্মে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।'
চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নেরর পাহাড়ি উপজাতি এলাকা মিশন এলাকা জুম পাড়া, বনগ্রাম কলা বাইজ্যাঘোনা আজিজ নগর এলাকার মানুষ সুপেয় পানি পাচ্ছেনা বছরের পর বছর। এসব এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে অধিকাংশ নলকূপ নষ্ট হয়ে গেছে। সুপেয় পানি না পেয়ে এলাকার মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়িত।
রাজানগর বগাবিলি এলাকায় স্কুল শিক্ষকা তাহমিনা তাসুনম বলেন, পানির সংকটের কারণে পারিবারিকভাবে মারাত্মকভাবে সমস্যায় আছি। পানি ছাড়া জীবন চলে না।
পারুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, ইউনিয়নের কৃষি জমিতেও পর্যাপ্ত পানি দিয়ে সেচ দিতে পারছি না। খাল, বিল, নদী, নর্দমা পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম। এতে ভালো ফসল পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছি। মোটরচালিত নলকূপ বসিয়েও পানির সংকট নিরসন করা যাচ্ছে না।
তবে অনেকে অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনৈতিক সুবিধা নিয়ে কোনো বাছবিচার না করে, নিয়ম নীতি না মেনে সরকারিভাবে যে পরিমাণ গভীর নলকূপ বসিয়েছে এতে পানি শুকিয়ে যাবার পেছনে অনেকাংশে উপজেলা জন স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ দায়িত্ব এড়াতে পারে না বলে অনেকে মনে করেন। এদিকে পুরোপুরি শুষ্ক মৌসুম শুরু হবার আগেই তাতে পানির হাহাকার শুরু হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো ডিপ টিবওয়েল থেকে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পানি পড়লেও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কোনো তদারক করে না ।
অভিযোগ রয়েছে- জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কোথাও কোথাও পরিবার পিছু মানুষকে ডিপটিউবওয়েল সরবরাহ করেছে। যার কারণে বহু এলাকায় চাপকল পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে বহু বছর ধরে। এমন অবস্থায় ডিপপিউবওয়েলেও পানির সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইয়াকুব ফারহান বলেন, 'গ্রীষ্মে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে গেছে। ফলে এ সময় গভীর এবং অগভীর নলকূপে পানি উঠে না। তবে এর মধ্যে ভারি বৃষ্টি হলে বন্ধ হয়ে যাওয়া সব টিউবওয়েল আবারও সচল হয়ে যাবে।'
তিনি আরও বলেন, যেসব টিউবওয়েল ৩০ থেকে ৪০ বছর আগের, সেগুলোতে এ সময়ে পানির সংকট দেখা যাওয়াটা স্বাভাবিক। যেসব টিউবওয়েল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে বসানো হয়েছে সেগুলোতে পানি না ওঠার কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। তবে রাঙ্গুনিয়ার পোমরা, বেতাগী, সফরভাটা এবং পৌরসভাসহ চারটি জায়গায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এরপরও কোনো ভুক্তভোগী যদি অভিযোগ করেন, তাহলে আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে আসব।' অভিযোগ পেলে যথাযথ
ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ : +৮৮ ০১৮১১৮৬৭৫৮৪
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত